হাজার বছর ধরে :বাঙালির হাজার বছরের জীবনধারা
হাজার বছর ধরে প্রখ্যাত বাঙালি ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান রচিত একটি কালজয়ী সামাজিক উপন্যাস। ১৯৬৪ সালে তিনি এ উপন্যাসটি লেখেন। "হাজার
বছর ধরে" উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন যুগ-যুগান্তরের বিবর্তনহীন গ্রামীণ
জীবনের ছায়াচিত্র।ক্ষুদ্র একটি গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের সংঘাতময়
জীবনের কাহিনী তিনি বর্ণনা করেছেন এতে। পরিবারটির কর্তা বুড়ো মকবুল।তার এই
পরিবার এবাড়িতে ৮ঘর লোকের বাস;সবাই নিম্নবিত্ত শ্রেণীর।জীবীকার তাগিদে
নারী-পুরুষ সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।হাজার বছর ধরে চলে আসছে গ্রাম
বাংলার মানুষের এ জীবনযুদ্ধ।এযুদ্ধে কখনও তারা জয়ী হয়;আবার কখনও হয়
পরাজিত। জীবিকার তাগিদে বাড়ির পুরুষদের কাজ করতে হয় ঘরে বাইরে , দিন রাত
যেন অক্লান্ত পরিশ্রম । বাড়ির নারী সদস্যরাও বাদ যায়না । তারা চাটাই
বোনা,অন্যের ধান ভাঙা,শাপলা তোলা এরকম আরো অনেক কাজ করে যতটা পারা যায়
তারা পরিবারের আয় উন্নতিতে সাহায্য করে । তবুও তাদের লড়তে হয় কঠিনতম
জীবন সংগ্রামে । এরপরেও আছে নানারকম কুসংস্কার,নানাবিধ ধর্মীয় গোঁড়ামী আর
বিধি নিষেধের বেঁড়া জাল । তবুও সবকিছু ছাপিয়ে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে তাদের
কঠিন সেই জীবন সংগ্রামের গল্প । লেখক এই উপন্যাসে আবহমানকালের
গ্রাম-বাংলার প্রায় সব দিকই তুলে এনেছেন। এই উপন্যাসে বাল্য বিবাহের
প্রসঙ্গ এসেছে, বহু বিবাহের কথা এসেছে। নারীদের অসম্মান করার ব্যাপার উঠে
এসেছে, এমনকি বউকে পিটিয়ে মেরে ফেলাও যে তৎকালীন সময়ে এমন অস্বাভাবিক কোন
ব্যাপার ছিল না সেটাও লেখক অসাধারণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন।
এই বইয়ে
সামাজিক কুসংস্কারের কথা উঠে এসেছেন, পরকীয়া প্রেমের কথাও বাদ যায়
নি.কেন্দ্রীয় চরিত্র টুনি আর মন্তুর মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন এই হাজার
বছর বয়স্কা বাংলার হাজারো যুবক যুবতীর হৃদয়ের কথা, হৃদয় ভাঙার কথা। আর
দশটা প্রেমের উপন্যাসের চেয়ে হাজার বছর ধরে'র অবস্থান অনেক অনেক উপরে।
কারণ এটি তথাকথিত প্রেম ভালোবাসার গাথা না। আম্বিয়াকে বলা যায় গ্রামের
অপ্রতিরোধ্য,স্বাবলম্বী এক নারীর প্রতীক ।
উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মাঝে
আছে মকবুল বুড়ো,গনু মোল্লা,আবুল,ফকিরের মা,মন্তু , আম্বিয়া,টুনি মোটকথা
আবহমানকাল ধরে চলে আসা বাঙালি জীবনের প্রায় প্রতিটি দিকই ঔপন্যাসিক অন্তত
সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। হাজার বছর ধরে চলে আসা আবহমান গ্রাম-বাংলার
সাধারণ মানুষের জীবন আখ্যান।